সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি:
নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁয়ের থানার একসময়কার মোস্টওয়ান্ডেট লিস্টের চিহ্নিত তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী তাইজুল ইসলাম হতে চান মসজিদের সভাপতি হতে প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ায় এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) বিকেলে উপজেলার কাবিলগঞ্জ এলাকায় বাইতুন নুর জামে মসজিদে গিয়ে মসজিদ কমিটি সম্পর্কে জানা যায়, বিগত ৯ মাস আগে মসজিদ কমিটির সভাপতি তাইজুদ্দিন মারা গেলে তার ছেলে ইকবাল হোসেন সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলো। কিন্তু হঠাৎ করেই সেই সভাপতি হওয়ার খায়েশ উঠে একই এলাকার মৃত জহুর আলীর ছেলে তাইজুল ইসলাম ওরফে তাজুর।
বাইতুন নুর জামে মসজিদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইকবাল বলেন, 'আমি ইতিমধ্যে তাইজুল ও তার বড়ভাই সাজুর হামলার শিকার। গত তিন দিন যাবত আমি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি। সোনারগাঁ থানায় অভিযোগ করেও তাজু ও সাজুদের কে দমানো যাচ্ছে না। বিভিন্ন ভাবে সভাপতি পদ ছেড়ে দিতে হত্যা ও গুমের হুমকি দিয়ে আসছে'।
ইকবাল আরো বলেন, 'আমাদের জায়গায় মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মানের পর ওয়াকফ করার সময় তৎকালিন মসজিদের জমিদাতা ও কমিটির সর্বসম্মতিক্রমে দলিলে এই মসজিদের সভাপতির দায়িত্ব আমাদের বংশধর থেকেই নির্বাচিত করতে হবে বলে উল্লেখ্য করা আছে। সে অনুযায়ী আমিসহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে গঠিত কমিটি দিয়ে বর্তমানে মসজিদটি পরিচালনা করে আসছি'।
মসজিদ কমিটির সভাপতি হওয়ার জন্য বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইকবাল হোসেনের উপর হামলার ঘটনায় তার বড়বোন শাহনাজ বেগম বাদী হয়ে সোনারগাঁ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, 'কাবিলগঞ্জ এলাকায় তাইজুল ইসলাম তাজু কুমিল্লা জেলায় গরু চুরি করে জেল খাটার পর থেকে গরু চোরা তাজু নামেই পরিচিত। আওয়ামী লীগের আমলে ৬ হাজার পিছ ইয়াবা ও ৮ রাউন্ড বিদেশি অস্ত্রের গুলিসহ গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি পুলিশ) গুলিস্তানে রাজধানী হোটেলে আটক করে মিন্টু রোডে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়। তাজু সোনারগাঁ থানার মোস্ট ওয়ান্টেড আসামীদের তালিকাভুক্ত। দীর্ঘদিন যাবত থানায় মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে ছবি টানানো ছিল। বর্তমানে সে মাদক ব্যবসা আড়াল করতে মসজিদ কমিটির দিকে কুনজর দিচ্ছে। তাই আমার ভাই ইকবালকে মেরে নিজেকে বাঁচাতে প্যারালাইজড হাতকে ভাঙ্গা হাত দেখিয়ে মিথ্যা ও হয়রানি মুলক অভিযোগ দায়ের করেছে। অতিদ্রুত এই নাটকবাজ আওয়ামী লীগকে আইনের আওতায় এনে আমার ভাইয়ের উপর হামলার বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি'।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বললে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন মুসল্লী জানান, বাইতুন নুর জামে মসজিদের জায়গা যারা দান করেছেন তারা সর্বসম্মতিক্রমে যেহেতু ওয়াকফ দলিলে উল্লেখ্য করে গেছেন জমিদাতা পরিবার থেকেই মসজিদের পরবর্তী সভাপতি নির্বাচিত হবে সেখানে তাজু ও সাজুর বাড়াবাড়ি করাটা বেআইনি।
কাবিলগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা মুহাম্মদ রিফাত হাসান বলেন, 'তাইজুল ইসলাম তাজু একজন আওয়ামী লীগ নেতা। যুবলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল। সে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র হত্যা মামলার তালিকাভুক্ত আসামী'।
থানার তালিকাভূক্ত মাদক ব্যবসায়ী কিনা এমন প্রশ্ন কৌশলে পাশ কাটিয়ে অভিযুক্ত তাইজুল ইসলাম ওরফে তাজু সাংবাদিকদের বলেন, 'এই মসজিদের সাবেক সভাপতি মরহুম তাইজুদ্দিন সাহেব কে গালাগালি করে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করা সভাপতি ইকবালকে মারধর করিনি। আমাকে অপবাদ দেয়া হচ্ছে'।
সোনারগাঁ থানার তদন্ত ওসি রাশেদ খান বলেন, 'মসজিদ কমিটি নিয়ে দু'পক্ষের অভিযোগ পেয়েছি। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র হত্যা মামলার আসামী তাজুর বিষয়টিও অবগত আছি। তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে'।